"একতা",শব্দটা ছোট তবে অর্থটি হলো প্রগাঢ়।
মানুষ থেকে শুরু করে, সমুদ্রের দানব খ্যাত নীল তিমি,, ডলফিন কিনবা জিরাফ,
মৌমাছি কিনবা বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এদের প্রত্যেকটিই হলো একতা ও দলবদ্ধ হয়ে বেঁচে
থাকার উদাহরণ।কিন্তু আজকে আমি কথা বলতে চাচ্ছি একটা অদ্ভুত, আশ্চর্যজনক তবুও বাস্তব
একটি প্রাণী জগত নিয়ে যারা আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে " হায়,ঈশ্বর এটা কিভাবে সম্ভব!
" আজকের আলচ্য প্রাণী হলো ডায়নোসরের যুগ থেকে লড়াই করে বেঁচে থাকা আজকের পৃথিবীর
সকল দেশে বিরাজ করা" পিঁপড়ে"।
পৃথিবীর সবচেয়ে সফল এবং অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রাণীর মধ্যে অন্যতম হলো
পিঁপড়ে।বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে পৃথিবীতে পিঁপড়ের প্রথম আবির্ভাব হয়েছিলো,১৪০-১৬৮মিলিয়ন
বছর আগে জুরাসিক সময়ের মধ্যে যখন পৃথিবীতে ডায়নোসর বিরাজ করতো এবং উদ্ভিদের মধ্যে ফার্ন
এবং পাইন নামক উদ্ভিদ জন্মাত।উক্ত সময়টিতে বর্তমান পৃথিবীর মহাদেশ গুলো বিভক্ত ছিলো
না।তখন সুপারকন্টিনেন্ট অর্থাৎ ইউরেশিয়া ও গন্ডোয়ানা ছিলো।তবে সময়ের সাথে সাথে ঘটে
নানা বৈরিতা।জলবায়ু পরিবর্তন কিনবা প্রাকৃতিক দূর্যোগ ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।ফলে সুপারকন্টিনেন্ট
বিভক্ত হয়ে বর্তমান পৃথিবীর মহাদেশ গুলোতে বিভক্ত হয়।মূলত ঐসময়ের মধ্যে পিঁপড়ে পুরো
পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি পিঁপড়ে এতো বৈরী পরিবেশেও অভিযোজিত হয়ে
লড়াই করে বেঁচে থাকতে সফল হয়।বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে পিঁপড়ের ১২,৫০০ টি প্রজাতিরও
বেশি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছেন।তবে ধারণা করা হয় যে এখনো ১০,০০০ টি প্রজাতির অস্তিত্ব
খুঁজে বের করা বাকি রয়েছে।পিঁপড়ের ডিএনএ গবেষণায় জানা গেছে,তাদের জেনেটিক কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাদের যেকোনো
পরিবেশে ছেড়ে দাওয়া হোক না কেন তারা জিনগতভাবে প্রতিক্রিয়া করে।বর্তমানে বিজ্ঞানীরা
চেষ্টা করছে পিঁপড়ের এই প্রতিক্রিয়া থেকে তথ্য নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাস প্রদান
করার।এবার আসা যাক আরোও রহস্যজনক বৈশিষ্ট্য।আপনি হয়তো আপনার জীবনে অনেক পিঁপড়ের বাসা
দেখেছেন।আপনি কি জানেন উপরে আপনার দেখা ছোট মাটির গর্তটি আসলে কত বড় হতে পারে!মূলত
পিঁপড়েদের মধ্যে রাণী পিঁপড়েই কেবল বংশবৃদ্ধি করে।এই জন্য দরকার হয় আশ্রয়ের।রাণী পিঁপড়ের
সহায়তার জন্য থাকে শারীরিক গঠন অনুযায়ী সৈন্য,খাদ্য সংগ্রহক ও শিশু পিঁপড়ে দেখা শোনা
ও ডিমের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য আয়া,আশ্রয় তৈরি করার জন্য প্রকৌশলী।সবচেয়ে অদ্ভুত
হলো এরা নিঃস্বার্থ ভাবে তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য শ্রম দিয়ে যায়। তারা নিজের জীবন দিতেও
পিছুপা হয় না। ভূমধ্যসাগরীয় আর্জেন্টিনীয়ান পিঁপড়ের কলোনি-ই হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড়
পিঁপড়ের কলোনি।এটি ৬০০০ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি জায়গা জুড়ে পাওয়া গিয়েছে।একটি পিপড়ের
গর্তের গভীরতা৪-২৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি পিঁপড়ের বাসা খুবই দারুণ
শৈলীতে তৈরি করা হয়।এমন ডিজাইন অনুসরণ করা হয় যাতে প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা
কক্ষ থাকে।পিঁপড়েদের দলবদ্ধ হয়ে খাবার নিতে আপনি অবশ্যই দেখেছেন।আপনি কি জানেন তারা
কিভাবে খাবারের সন্ধান পাওয়া মাত্র ঐক্যবদ্ধ হয়।আসলে তারা যোগাযোগ করতে পারে। কিন্তু
কিভাবে? এবার আসছি সেই ব্যাখ্যায়।পিঁপড়েরা ফেরোমন নামক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে
বিভিন্ন সংকেত কলোনিতে পৌঁছাতে।পিঁপড়েরা তার অ্যান্টেনার সাহায্য নিয়ে ফেরোমন নামক
রাসায়নিক পদার্থটির লাইন তৈরী করে বাসস্থান থেকে দূরে খাবারের সন্ধানে যায়।যে স্থানে
খাবার পায় সেখান থেকে পিছন দিক থেকে রাসায়নিক সংকেত পাঠায়।কলোনির পিঁপড়েরা সংকেত পেয়ে
লাইনধরে চলে চায় খাদ্য পরিবহন করতে।লাইনটির পাশ দিয়ে যায় সৈন্য পিঁপড়ে এবং মাঝখানে
কর্মী পিঁপড়ে।যেকোনো বিপদ দেখলে আক্রমণ করার জন্য তারা শত্রুর পাশে রাসায়নিক পদার্থ
স্প্রে করে এবং আত্ম রক্ষার্থে সবাই শত্রুর শরীরে ফরমিক এসিড নিঃসরণ করে।আপনার হয়তো
জানতে ইচ্ছে করছে কিভাবে একটি পিঁপড়ে তার আকারের চেয়েও বড় বস্তু বহন করে এতো দূর যাত্রা
করতে পারে।পিঁপড়ে আসলে কাজে লাগায় পদার্থবিজ্ঞানকে।স্কেলিং হলো সেই পদার্থবিদ্যার ধারণা
যা তারা কাজে লাগায়।আসলে তাদের ছোট শরীরটিই তাদেরকে তাদের ওজনের বেশি ওজন তুলতে সক্ষম
করে।তাদের শরীরের আকার ও ভরের মধ্যে থাকা অনুপাত
তাদের এতো বেশি বড় বস্তু তুলতে সাহায্য করে।আমরা আজ যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে এতো ওজনের
বস্তু তুলি তারা সেই একই ভাবে যুগ যুগ ধরে তা করে আসছে।আসলে এর সবই সম্ভব হয়েছে এক
quadrillion পিঁপড়ের সমন্বিত অভিযোজনের ফলে।তাদের কর্মকাণ্ড থেকে আমরা শিক্ষা নিতে
পারি একতাই শক্তি। পরের বার পিঁপড়ে দেখে পিশে ফেলার আগে একটু চিন্তা করে নিবেন হাহা।
আরও পড়ুনঃ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন